Bangabandhu conferred ‘FOSWAL Literature Award’ for his trilogy
— March 26, 2023RN Desk: The Foundation of SAARC Writers and Literature (FOSWAL) on Sunday conferred “Special Literary Award” to Bangladesh’s Father of…
আজকের অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি,
মাননীয় অর্থমন্ত্রী জনাব এ এম এ মুহিত, বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ও পদক গ্রহণের জন্য আমন্ত্রিত বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আমাদের অনেকের শিক্ষকের শিক্ষক শ্রদ্ধেয় প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আবুল বারকাত, শ্রদ্ধেয় প্রফেসর জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রাক্তন গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরবৃন্দ এবং উপস্থিত অন্যান্য বিশিষ্ট অতিথিবৃন্দ; আসসালামু আলাইকুম। সবার জন্য আমার উষ্ণ শুভেচ্ছা।বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অসামান্য অবদান, দেশীয়, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক অঙ্গনে উন্নয়ন এবং অর্থনীতির তাত্ত্বিক গবেষণা ও প্রায়োগিক চর্চায় সুদীর্ঘ ছয় দশকব্যাপী কর্মজীবনের বর্ণিল ভূমিকার স্বীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংক পুরস্কার ও পদক গ্রহণে সম্মত হওয়ায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেনকে আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। একইসঙ্গে তাঁকে এ সম্মান দেবার সুযোগ পেয়ে আমরা নিজেদের ধন্য মনে করছি। তাঁর কর্মজীবনের অবিস্মরণীয় অবদান স¤পর্কে আপনারা ইতোমধ্যে আমার পূর্ববর্তী বক্তাদের মুখে শুনেছেন। তবুও কয়েকটি দিক আমি আবারও সংক্ষেপে উল্লেখ করতে চাই। এ প্রসঙ্গে তথ্য সহায়তার জন্য আমি বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. মাহবুব হোসেনের কাছে কৃতজ্ঞ। প্রফেসর মুশার্রফ হোসেন অর্থনীতিতে মাস্টার্স অব আর্টস ডিগ্রী অর্জন করেন প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে ম্যানচেষ্টার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তিনি লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি অর্জন করেন অর্থনীতির উপর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫১-৫২ সালে প্রভাষক হিসাবে এবং ১৯৭৪-৯১ সাল পর্যন্ত অধ্যাপক হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৫৭-৫৮ সালে পূর্ব পাকিস্তান চষধহহরহম ইড়ধৎফ এর ঊপড়হড়সরংঃ হিসাবে কর্মরত ছিলেন তিনি। ১৯৫৮-৫৯ সালে তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ঞধীধঃরড়হ ঊহয়ঁরৎু ঈড়সসরংংরড়হ এর ঊপড়হড়সরংঃ হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৫৮-৬৮ সাল পর্যন্ত অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৮-৭০ সাল পর্যন্ত ণড়ৎশ টহরাবৎংরঃু ট.ক তে ঘঁভভরবষফ ধহফ খবাবৎযঁষসব ঋবষষড়ি হিসাবে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি মুজিবনগর সরকারের চষধহহরহম ঈবষষ এর সদস্য এবং ১৯৭২-৭৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের চষধহহরহম ঈড়সসরংংরড়হ এর সদস্য ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে জাতিসংঘের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এবং অন্যান্য বৈদেশিক সাহায্যকারী সংস্থায় গবেষণামূলক কাজ করেছেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ক্ষুধা ও দারিদ্র্য দূরীকরণ, ঋণ সহায়তার শর্ত সহজীকরণ, রপ্তানির কাঠামোগত পরিবর্তন, রেমিটেন্সের আন্তঃপ্রবাহ বৃদ্ধি এবং তার প্রভাব, এষড়নধষরুধঃরড়হ এর প্রভাব, বাংলার অর্থনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস, নাগরিক সমাজ ও সুশাসন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে গবেষণামূলক কাজ করছেন। প্রফেসর মুশার্রফ হোসেন দেশের বিভিন্নমুখী উন্নয়ন ইস্যুতে নিজেকে জড়িত রাখতে বরাবরই স্বাচ্ছন্দবোধ করেছেন এবং এখনও তা পছন্দ করেন।প্রফেসর মুশাররফ্ হোসেন বাংলাদেশের অর্থনীতির কাঠামো, জনসংখ্যা, গ্রামীন উন্নয়ন, কর, সরকারী ব্যয়, বৈদেশিক সাহায্য, খাদ্য স্বনির্ভরতা, দারিদ্রবিমোচন, কৃষি উন্নয়নে সমস্যা চিহিক্রতকরণ, ক্ষুধা ও অপুষ্টি দূরীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে অনেক প্রবন্ধ রচনা করেছেন যা দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জার্নাল ও বইয়ে প্রকাশিত হয়েছে।তাঁর রচিত গ্রন্থাবলী ও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রবন্ধসমূহ দেশ-বিদেশে তরুণ প্রজন্মের অর্থনীতিবিদদের গবেষণা কাজে সহায়ক উপাদান যোগাচ্ছে। ১৯৯১ সালে টচখ থেকে প্রকাশিত বই “অমৎরপঁষঃঁৎব রহ ইধহমষধফবংয” প্রমাণ করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা। এ বই অনেক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে পড়ানো হয়। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির চেয়ে সামাজিক উন্নয়নকে বেশি প্রাধান্য দেন। ১৯৮৭ সালে তাঁর পুস্তক “ঞযব অংংধঁষঃ ঃযধঃ ভধরষবফ” ই তার প্রমাণ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ১৯৯৮ সালে প্রকাশিত “জবঢ়ড়ৎঃ ড়হ ঃযব ঘধঃঁৎব ধহফ ঊীঃবহঃ ড়ভ গধষহঁঃৎরঃরড়হ রহ ইধহমষধফবংয” এর সহলেখক ছিলেন তিনি। এ রিপোর্টটিকে বাংলাদেশের অপুষ্টি বিষয়ক রিপোর্টসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বিশ্লেষণধর্মী রিপোর্ট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।বড়ই আনন্দের কথা যে আজও তিনি তাঁর বুদ্ধি বৃত্তিক চর্চায় দারুণ তৎপর রয়েছেন এবং অসামান্য সৃজনশীলতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। আজীবন তিনি তরুণদের সৃজনশীল ভাবনা ও উদ্যোগের প্রতি উৎসাহ দিয়ে আসছেন। তাঁর এ উদার উৎসাহ সিঞ্চনের প্রক্রিয়া থেকে ব্যক্তিগতভাবে আমিও বাদ পড়িনি। সে কারণেও স্যারের কাছে আমার ঋণের কোন শেষ নেই। ছাত্রজীবনে স্যার আমার জন্য এমন কিছু সহায়তামূলক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন যা আমি চিরদিন মনে রাখব। তাঁর কাছে আমি চিরকৃতজ্ঞ। প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেনের উজ্জ¦ল কর্মজীবনের স্বীকৃতিস্বরূপ তাঁকে পুরস্কৃত করতে পেরে বস্তুত আমরা নিজেদেরকেও পুরস্কৃত করছি, যা সমষ্টিগতভাবে নিজেদের সামর্থ্যরে উপর আমাদের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস আরো জোরদার করবে। স্বভাবগতভাবেই জাতি হিসেবে আমরা বোধ হয় কিছুটা প্রশংসাবিমুখ। অনেকক্ষেত্রেই কারো সাফল্যের বা কৃতিতে¦র দৃষ্টান্তকে আমরা প্রশংসার চেয়ে সন্দেহের চোখে দেখতেই হয়ত বেশী পছন্দ করি। প্রথাগত বিশ্বাস বা সহজ জনপ্রিয়তার বিষয়ে স্বপ্রশ্ন থাকা ভালো, কিন্তু এর মাত্রাধিক্যই আবার নৈরাশ্যবাদের নামান্তর। আত্মবিশ্বাস ক্ষুন্নকারী এই নৈরাশ্যবাদই বোধহয় উন্নয়ন নীতি ও কৌশলের প্রশ্নে আমাদের অত্যধিক বিদেশী পরামর্শ বা উপদেশ নির্ভরতার কারণ যা জাতি হিসেবে নিজস্ব মেধা ও প্রতিভা বিকাশের অন্তরায়। আমাদের প্রতিবেশী দেশগুলোতে অবশ্য এ প্রসঙ্গে ভিন্ন অবস্থা দেখা যায়। প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেনকে পুরস্কৃত করে আজ আমরা আমাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত সামর্থ্য ও সম্ভাবনার বিষয়ে আস্থা ও আত্মবিশ্বাস জোরদার করবো; তাঁর দৃষ্টান্তমূলক কর্মজীবন থেকে শিক্ষা ও অনুপ্রেরণা নেবার জন্য তাঁর কাজের সঙ্গে আমাদের নবীন প্রজন্মের অর্থনীতিবিদদের পরিচয়ের সেতু প্রশস্ততর করবো-সে অভিপ্রায়েই আমরা আজকের এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। আশা করছি, তরুণ প্রজন্মের অর্থনীতিবিদরা এ আয়োজন থেকে শিক্ষা নেবেন এবং ভবিষ্যতে মৌলিক গবেষণায় আরো বেশি উৎসাহী হবেন। দেরিতে হলেও প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেনকে পুরস্কৃত করার এ ক্ষুদ্র প্রয়াসের মাধ্যমে তাঁর সাথে তরুণ প্রজন্মের অর্থনীতিবিদদের সেতুবন্ধন তৈরি করতে পেরে বাংলাদেশ ব্যাংক বেশ তৃপ্ত। তাছাড়া, তাঁর এবং তাঁর সতীর্থদের স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে আমরা যারা এখন নিবেদিত, তাদের জন্যেও স্যারের এ পুরষ্কারপ্রাপ্তি বিপুল অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে আমার বিশ্বাস। প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেনের সম্মাননা গ্রহণ সম্ভাষণের শেষে আজকের এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘটবে। অনুষ্ঠানটির সুষ্ঠু আয়োজনের জন্য নিরলস পরিশ্রমকারী আয়োজক কমিটিকে এবং অনুষ্ঠানে উপস্থিতির জন্য আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামের যে মৌল আকাক্সক্ষা নিয়ে প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেন এবং তাঁর সহযোগীরা নিজেদের বর্তমান আমাদের ভবিষ্যতের জন্য উৎসর্গ করেছেন তা কিন্তু এখনো অনেকটাই অপূর্ণ রয়ে গেছে। আসুন, যে যেখানেই থাকিনা কেন আমরা সকলে মিলেই তাঁদের সে স্বপ্নপূরণে ব্রতী হই। আমাদের সকলের শিক্ষাগুরু প্রফেসর ড. মুশার্রফ হোসেন, তাঁর সহযোগীবৃন্দ এবং আপনারা সকলে সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন। ধন্যবাদ সবাইকে।