জাতীয় শোক দিবস
— August 16, 2011‘তার জন্ম একটি জাতির উন্মেষ, নতুন দেশের অভ্যুদয়।/ তার মৃত্যু অমোচনীয় কলঙ্ক, এক করুণ ট্র্যাজেডি।/বঙ্গোপসাগর শোভিত ব-দ্বীপে জ্বলজ্বল/তার নাম শেখ মুজিবুর রহমান।’
আজ রক্তাক্ত ১৫ আগস্ট। আজ মহাশোকের দিন। তাঁর শাহাদাতবরণের দিন। ১৯৭৫ সালের এই কৃষ্ণদিনে বাংলাদেশ হারিয়েছে তার স ষ্টাকে। আর জাতি হারিয়েছে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে। তিনি বঙ্গবন্ধু, জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। বেদনাবিধূর ও কলঙ্কের কালিমায় কলুষিত বিভীষিকাময় ইতিহাসের এক ভয়ঙ্কর দিন। স্বাধীন বাংলার স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনের কালরাত্রিতে ঘটেছিল ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক ঘটনা। কিছু উচ্ছৃংখল ও বিপথগামী সৈনিকের হাতে সপরিবারে প্রাণ দিয়েছিলেন বাঙ্গালির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ সন্তান, স্বাধীনতার মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। নৃশংস এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন আর যারা প্রাণ হারিয়েছিলেন তারা হলেনঃ বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, পুত্র শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, রোজী জামাল, ভাই শেখ নাসের ও কর্নেল জামিল। ইতিহাসের এই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে সেদিন আরো প্রাণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মনি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি, ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শহীদ সেরনিয়াবাত, শিশু বাবু, আরিফ রিন্টু খানসহ অনেকে। বাংলাদেশ ও বাঙালির জন্য গভীর মর্মস্পর্শী এক শোকের দিন আজ। বাঙালি জাতি আজ গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় তাঁর শ্রেষ্ঠ সন্তানকে স্মরণ করবে।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে শ্রেষ্ঠতম পুরুষ, একটি স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র হিসাবে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকেই আগস্ট আর শ্রাবণ যেন মিলেমিশে শোকে একাকার। বাংলার মানুষের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে (১৯২০-১৯৭৫) স্বদেশের মাটি আর মানুষকে এমন গভীর ভালোবাসার বন্ধনে বেঁধেছিলেন, যে বন্ধন কোনোদিন ছিন্ন হবার নয়। আজীবন ঔপনিবেশিক শোষণ-বঞ্চনার বিরুদ্ধে, দরিদ্র নিপীড়িত বঞ্চিত মানুষের মুক্তির সংগ্রামে এমন এক অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন, যার তুলনা বিরল।
এ বছর অন্যরকম পরিবেশে শোক দিবস পালনে প্রস্তুতিও ব্যাপক। হাজার হাজার শোকের তোরণ, কালো ব্যানার, ফেস্টুন, পতাকা, পোস্টারে ছেয়ে গেছে দেশের পথ-প্রান্তর। পঁচাত্তরের পর রাজধানী থেকে শুরু করে সারাদেশেই প্রতিটি মোড়ে মোড়ে, গ্রাম-মহলvয়, হাটে-বাজারে কৃতজ্ঞ বাঙালির শোক পালনের এত ব্যাপক আয়োজন এবারই প্রথম। শুধু আওয়ামী লীগই নয়, সারাদেশের স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী প্রতিটি মানুষ, সংগঠন এবার বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে স্মরণ করছেন স্বাধীনতার এই মহান স্থপতিকে।
একজন প্রকৃত নেতার যেসব গুণাবলী থাকা প্রয়োজন, তার সব গুণ নিয়েই জন্মেছিলেন ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ। যাঁর রাজনৈতিক জীবন ছিল বহুবর্ণিল, যাঁর কণ্ঠে ছিল জাদু। যিনি রচনা করেছিলেন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিজয় ইতিহাস। এতকিছুর পরও শেষ পর্যন্ত তাঁকে জীবন দিতে হয়েছে ঘাতকের হাতে। ৩৬ বছর আগে ১৯৭৫ সালের এই কালিমাময় দিনে জাতি হারিয়েছে তার গর্ব, ইতিহাসের মহানায়ক, শেখ মুজিবুর রহমানকে। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ঘৃণ্য সর্বনাশা চক্রান্তে একদল ঘাতকের পৈশাচিকতার বলি হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার-পরিজন। রচিত হয় ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। কিন্তু তাতে তো এমন একজন রাষ্ট্রনায়ককে একটি জাতির হূদয় থেকে চিরতরে মুছে ফেলা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধু ফিরে আসেন প্রতিটি উত্সবে, আনন্দ-বেদনায়। তিনি যে মৃত্যুঞ্জয়ী। রাজনীতির সঙ্গে সামান্যতম সম্পৃক্ততা না থাকা সত্ত্বেও নারী-শিশুরাও সেদিন রেহাই পায়নি ঘৃণ্য কাপুরুষ এই ঘাতকচক্রের হাত থেকে। বিদেশে থাকার জন্য প্রাণে বেঁচে যান কেবল বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। দিনটি তাই বাঙালীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কিত। আজ সেই শোকের দিন, কান্নার দিন। জাতীয় শোক দিবসে আজ বাঙালী গভীর শোক ও শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে বাংলাদেশ নামক ভূখন্ডের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে। সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় যথাযোগ্য মর্যাদায় আজ বঙ্গবন্ধুর ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকী পালিত হচ্ছে।
এ বছর ১৫ আগস্ট এসেছে একটি ভিন্ন আবহে, ভিন্ন অবয়বে। বাংলাদেশের স্থপতির নির্মম-নৃশংস হত্যাযজ্ঞের বিচার পেতে বাঙালী জাতিকে ৩৪টি বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে। প্রতি পদে পদে খুনীদের দোসর ও মদদদানকারী সরকারের ষড়যন্ত্র-চক্রান্তের বেড়াজালে আটকে থেকেছে ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম এই হত্যাযজ্ঞের বিচার। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার পর দীর্ঘদিন বাংলাদেশের রাজনৈতিক আকাশ ছিল তিমিরাচ্ছন্ন। দেশ পরিচালনার নেতৃত্ব গ্রহণ করে অনির্বাচিত সরকার। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ইন্ধনে আশ্রয়-প্রশ্রয় পায় বঙ্গবন্ধুর খুনিরা। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। পৃথিবীর ইতিহাসে যত নৃশংস খুনের ঘটনা ঘটেছে ১৫ আগস্টের ভয়াল ঘটনা সব কিছুকে ছাড়িয়ে গিয়েছিল। সেদিন দুগ্ধপোষ্য শিশু, অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী, প্রতিবন্ধী কেউই ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পাননি। অন্তঃপুরবাসিনী যে নারী সাধারণের সামনে নিজেকে কখনই প্রকাশ করেননি তিনিও নৃশংস খুনের শিকার হন। বিশ্ব বিবেক এ খুনের ঘটনায় স্তম্ভিত হয়ে যায়। কিন্তু তারপরও দীর্ঘদিন সাংবিধানিক ইনডেমনিটি দিয়ে অপরাধীদের আড়াল করে রাখা হয়। এমনকি তারা দোর্দন্ড প্রতাপ নিয়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে দাপিয়ে বেড়িয়েছে এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। দীর্ঘদিন জাতিকে বয়ে নিয়ে বেড়াতে হয়েছে এ খুনের কলংক। সময়ের পালাবদলে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ হত্যাকান্ডের বিচারের পথ উন্মুক্ত হয়। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ বাতিল করে সরকার অপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নেয়। অনেক জটিলতার মধ্য দিয়ে বিচার সম্পন্ন হলেও রায় কার্যকর করতে আরো ১০ বছর লেগে যায়। ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারায় খুনিদের বিচারের রায় কার্যকর আবারো অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। রাজনৈতিক হত্যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সংঘটিত হয়েছে বিভিন্ন কাল পরিসরে। কিন্তু প্রতিটি হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশে? এখানে ইতিহাস যেন উল্টো পথযাত্রী! এখানে বিচার বিঘি্নত। বিশ্বের ইতিহাসে একসঙ্গে এতো নৃশংস রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের নজীর নেই বললেই চলে। তবুও কী আশ্চর্য, এই ভয়ঙ্কর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত আত্মস্বীকৃত খুনীদের চূড়ান্ত শাস্তি পেতে কেটে যায় একে একে ৩৪ বছর। বিচারের পথে সৃষ্ট দীর্ঘ বাধার প্রাচীর বিতর্কিত করে দেশের সুপ্রীম কোর্ট এবং বিচারপতিদেরও। জাতি দেখেছে এই দীর্ঘ সময়ে নিষ্ঠুর এই ঘাতকদের প্রকাশ্যে পুরস্কৃত করার ঘৃণ্য চিত্র। সেই বাধার প্রাচীর ডিঙিয়ে অবশেষে বিচারের বাণীর নিভৃত কান্নার অবসান ঘটল ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি মধ্যরাতের পর। ঢাকা কেন্দীয় কারাগারে ফাঁসির রায় কার্যকর হয় পাঁচ আত্মস্বীকৃত খুনীর। কলঙ্কমুক্তির আনন্দে উদ্বেল হয় গোটাদেশ। তবুও জাতির খুনীদের প্রতি ঘৃণা এতোটুকুও কমেনি। অনেকেরই মত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলেও এসব ঘৃণ্য নরপশুদের প্রতি বাঙালির ঘৃণা-ধিক্কার এতোটুকুও কমবে না। বরং দেশ যতদিন থাকবে, ততদিন এসব ঘাতকদের কবরে প্রজন্মের পর প্রজন্মের সন্তানরা তাদের হূদয়ের ঘৃণা জানাতে এতটুকুও ভুলবে না।
দীর্ঘ ৩৪ বছর পর বাঙালি জাতি পিতৃহত্যার কলঙ্ক থেকে মুক্ত হয়। যারা একসময় নিজেদের বিচারের ঊর্ধ্বে ভেবেছিল এবং তাদের কেউ স্পর্শ করতে পারবে না বলে দম্ভ করেছিল; এই বিচার ও দন্ডাদেশ কার্যকর করার ভেতর দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বাংলার মাটিতে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। আর বিচারের দীর্ঘতম প্রক্রিয়া শেষে রায় কার্যকরের মধ্যদিয়ে শেষ হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের অত্যন্ত মর্মস্পর্শী করুণ এক অধ্যায়ের। কিন্তু এখনো বঙ্গবন্ধুর ছয় খুনী বিদেশে পলাতক। ওই পলাতক খুনীদের ফিরিয়ে এনে ফাঁসির রায় কার্যকর এবং যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার অঙ্গীকার নিয়ে কলঙ্কমুক্ত বাঙালি জাতি আজ শোক দিবস পালন করবে। একটি জাতি রাষ্ট্রের স্থপতিকে সপরিবারে খুনের ঘটনার পর অপরাধীদের দাম্ভিকতা প্রদর্শন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল ঘটনা। দীর্ঘ সময় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে তাদের পরিবারের সকল সদস্য হারানোর মর্মান্তিক বেদনা বয়ে বেড়াতে হয়েছে। শুধু তাই নয়, জাতির কাছে পিতা, মাতা, ভাই ও স্বজন হারানোর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হয়েছে তাদের। কিন্তু রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাদের এই মর্মযাতনা কেউ অনুভব করেনি।
বঙ্গবন্ধুর পাঁচ আত্মস্বীকৃত ঘৃণ্য খুনীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ডাদেশ কার্যকর করা হলেও এখনো বিদেশের মাটিতে পলাতক রয়েছে আরও ছয় খুনী। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে এই ছয় খুনী প্রায় একযুগ ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এসব খুনী হলোঃ লে. কর্নেল (বরখাস্ত) খন্দকার আবদুর রশিদ, মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিম, লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী, মেজর (অব.) এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী, ক্যাপ্টেন (অব.) আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেমউদ্দিন খান। পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন আরেক আসামি আজিজ পাশা। পলাতক এসব আত্মস্বীকৃত খুনীকে দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকার নানামুখী উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে সরকার থেকে যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও লিবিয়ার কাছে চিঠিও দেয়া হয়েছে। খুনীদের ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। জানা গেছে, এসব খুনী যুক্তরাষ্ট্র, লিবিয়া ও কানাডায় পলাতক রয়েছে। তবে সংশিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে দু’জনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে লে. কর্নেল এ এম রাশেদ চৌধুরী এখন যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলসে অবস্থান করলেও কানাডায় রাজনৈতিক আশ্রয় নেয়ার চেষ্টা করছেন। বেশ কিছুদিন জার্মানিতে লুকিয়ে থাকার পর লে. কর্নেল এইচ এম বি নূর চৌধুরী এখন রয়েছেন কানাডায়। সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য না থাকলেও বিভিন্ন সূত্র জানায়, লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ মূলত অবস্থান করেন লিবিয়ার বেনগাজি শহর ও পাকিস্তানে। লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিমের ব্যবসাসহ বিভিন্ন কর্মকান্ড কেনিয়াকে কেন্দ করে পরিচালিত হলেও তিনি মাঝে-মধ্যে লিবিয়া ও পাকিস্তানে আসা-যাওয়া করেন। আবদুল মাজেদ ও মোসলেম উদ্দিনও বর্তমানে পাকিস্তান ও লিবিয়ায় লুকিয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে।
এসব পলাতক খুনীদের দেশে ফিরিয়ে আনা হবে, কার্যকর করা হবে মৃত্যুদন্ডাদেশ- এই প্রত্যয় আর অঙ্গীকারের মধ্য দিয়েই এবার পালিত হবে শোকাবহ ১৫ আগস্ট। আজ যখন জাতীয় শোক দিবসে মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করছে জাতি, তখন সঙ্গত কারণেই নবীণ প্রজন্মকেও স্মরণ করিয়ে দিতে হবে- নিজের জীবনের চেয়েও দেশ আর দেশের মানুষকে যিনি ভালোবেসেছিলেন, ফাঁসি নিশ্চিত জেনেও যিনি পাকিস্তানি কারাগারে বসে আপস করেননি স্বাধীনতার প্রশ্নে, যিনি বারবার জীবনের ঝুঁকি নিয়েছিলেন, এ দেশের স্বাধীনতা আর জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক মুক্তি চেয়েছিলেন, এ জাতি তাঁরই উত্তরসূরি। যিনি ১৫ আগস্ট কালরাতে ঘাতকদের মেশিনগানের মুখেও ছিলেন অকুতোভয়, প্রশ্ন করেছিলেন, ‘তোরা কী চাস? কোথায় নিয়ে যাবি আমাকে?- সেই অনির্বাণ সূযের্র প্রখর ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুর দৈহিক বিনাশ ঘটলেও তাঁর আদশের্র মৃত্যু হতে পারে না। মানুষ মরে যায়, আদর্শ মরে না। বঙ্গবন্ধু নিজেও একাধিক বক্তৃতায় এ কথা বলেছিলেন। তাই বঙ্গবন্ধু কোনো ব্যক্তিমাত্র নন, অবিনশ্বর এক আদর্শ ও প্রেরণার নাম। সেই প্রেরণাতেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি নাম, একটি ইতিহাস। তাঁর জীবন ছিল সংগ্রামমুখর। সংগ্রামের মধ্যেই বড় হয়েছিলেন তিনি। তত্কালীন বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ছাত্র অবস্থায় তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। ৫২’র ভাষা আন্দোলনে তিনি ছিলেন সংগ্রামী নেতা। বাঙ্গালি জাতির মুক্তি সনদ ৬ দফার প্রণেতাও ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। ৭০’র নির্বাচনে অংশ নিয়ে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগকে এদেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে পরিণত করেন। অবিসংবাদিত এই নেতার চলার পথ ছিল কন্টকাকীর্ণ। পাকিস্তানের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক আন্দোলন গড়ে তুলে ষাটের দশক থেকেই তিনি বাঙ্গালি জাতীয়তাবাদের অগ্রনায়কে পরিণত হন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার তত্কালীন রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উত্তাল সমুদ্রে বঙ্গবন্ধু বজ দৃপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেছিলেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ এই ঘোষণায় উদ্দীপ্ত, উজ্জীবিত জাতি স্বাধীনতার মূলমন্ত্র পাঠ করে সেদিন পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জাতির ইতিহাসের শ্রেষ্ঠ পুরুষ বঙ্গবন্ধুর অমর কীর্তি স্বাধীন বাংলাদেশ।
কর্মসূচিঃ আজ যথাযোগ্য মর্যাদায় ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর ৩৬তম শাহাদতবার্ষিকী, জাতীয় শোক দিবস। আজ সরকারি ছুটির দিন। আজ সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ভবন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। দিনের শুরুতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন রাষ্ট্রপতি মোঃ জিলyর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে গিয়ে ১৫ আগস্টে শহীদ বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সদস্য ও অন্য শহীদদের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করবেন। পরে প্রধানমন্ত্রী হেলিকপ্টারযোগে টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে বঙ্গবন্ধুর মাজারে ফাতেহা পাঠ এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দু’টি স্থানেই তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল বঙ্গবন্ধুর প্রতি গার্ড অব অনার প্রদান করবেন।
আওয়ামী লীগের কর্মসূচিঃ আজ ভোরে আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু ভবন ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সব কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা অর্ধনমিত ও কালো পতাকা উত্তোলন করবে। ৬টা ৪০ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন (ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন এবং নগরীর প্রতিটি শাখা থেকে শোক মিছিলসহ বঙ্গবন্ধু ভবনের সম্মুখে আগমন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন), সকাল সাড়ে ৭টায় বনানী কবরস্থানে ১৫ আগস্টের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, মাজার জিয়ারত, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। ১০টা ১৫ মিনিটে টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন, ফাতেহা পাঠ, মোনাজাত, দুপুর দেড়টায় মিলাদ ও বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে মহিলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। বাদ আছর দেশের সকল ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলায় মিলাদ মাহফিল ও ইফতার অনুষ্ঠিত হবে। বেলা সাড়ে ১১টায় মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দে আলোচনা সভা। সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখবেন বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
দেশব্যাপী অজস্র রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাবেন। বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয়েছে বিশেষ সংখ্যা। রেডিও-টেলিভিশনসহ নানা ইলেকট্টনিক মিডিয়ায় জাতির পিতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রচারিত হচ্ছে নানা অনুষ্ঠান। সাংবাদিক সমাজের পক্ষ থেকে আজ সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজন করা হয়েছে সর্বধর্ম প্রার্থনা সভা। ঢাকা ক্লাব শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজন করেছে দোয়া মাহফিলের।
রাষ্ট্রপতির বাণীঃ রাষ্ট্রপতি মো. জিলyর রহমান জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে বলেন, আজ বাঙালি জাতির শোকাবহ দিন। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৩৬তম শাহাদাতবার্ষিকী আজ। আমি এ দিনে শোকাহত চিত্তে গভীর শ্রদ্ধা জানাই মহান স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁর পরিবারের শহীদ সদস্যদের স্মৃতির প্রতি। তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির ইতিহাসে এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। দেশের স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে ঘাতকচক্রের হাতে ধানমন্ডির নিজ বাসভবনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ হন। তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর অবদান অপরিসীম। তাঁরই নেতৃত্বে বাঙালি জাতি অর্জন করে বহু কাঙি্ক্ষত স্বাধীনতা। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে তদানীন্তন ’৫৮-এর সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন, ’৬৬-এর ৬-দফা, ’৬৯-এর গণ-অভ্যুত্থান, ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচনসহ এ দেশের গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে তিনি এই জাতিকে নেতৃত্ব দেন। এ জন্য তাঁকে বহুবার কারাবরণসহ অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে। দুইদশকেরও বেশি সময় ধরে এদেশের জনগণকে জাতীয়তাবাদী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে এই মহান নেতা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ ঘোষণা করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা। এ জন্য পুনরায় তাঁকে কারাবরণ করতে হয়, যেতে হয় ফাঁসির মঞ্চে। তবুও তিনি শত্রুর সাথে আপোষ করেননি। দেশ ও জনগণের স্বার্থকে সারাজীবন সমুন্নত রেখেছেন। দুঃখী মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তাই ঘাতকচক্র জাতির জনককে হত্যা করলেও তাঁর আদর্শ ও নীতিকে ধ্বংস করতে পারেনি। এ দেশ ও জনগণ যতদিন থাকবে ততদিন জাতির জনকের নাম এদেশের লাখো-কোটি বাঙালির অন্তরে চির অ¤vন হয়ে থাকবে। আশার কথা, দীর্ঘ ৩৫ বছর পরে হলেও জাতির জনক ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যাকারী ঘাতকদের বিচার বাংলার মাটিতে সম্পন্ন হয়েছে। জাতি আজ অনেকটা কলঙ্কমুক্ত। যেসব মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত ঘাতক আজো বিদেশে পালিয়ে রয়েছে তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের রায় কার্যকর করতে সর্বোচ্চ তত্পরতা চালাতে হবে। জাতি জানবে, হত্যাকারীদের ঠাঁই পৃথিবীর কোথাও নেই। রাষ্ট্রপতি বলেন, জাতির জনক ‘সোনার বাংলা’র স্বপ্ন দেখেছিলেন। আমাদের দায়িত্ব হবে দেশকে একটি সুখী ও সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির জনকের সেই স্বপ্ন পূরণ করা। তাহলেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে এবং আমরা এই মহান নেতার প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করতে পারবো। আসুন, আমরা জাতির জনককে হারানোর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করি এবং দেশ গঠনে আত্মনিয়োগ করি।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী:প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে তার বাণীতে বলেন, আজ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে মানব ইতিহাসের ববর্রতম হত্যাকান্ডের শিকার হয়ে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে শাহাদতবরণ করেন। জাতীয় শোক দিবসে আমি মহান আলvহ্তায়ালার দরবারে সেদিনের সকল শহীদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শী, গতিশীল এবং ঐন্দ জালিক সাহসী নেতৃত্বে এই ভূ-খন্ডের মানুষ হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে ছিনিয়ে এনেছিল স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য। বাঙালি পেয়েছে নিজস্ব জাতিরাষ্ট্র। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে বঙ্গবন্ধু যখন সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত তখনই তাঁকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি বাঙালির ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি ও অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস চালায়। অসামপ্রদায়িক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের রাষ্ট্রকাঠামোকে ভেঙে ফেলাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি শুরু করে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকারকে হটিয়ে সংবিধান স্থগিত করে মার্শাল ল’ জারি করা হয়। সেনাশাসক জিয়া গণতন্ত্রকে হত্যা করে দেশে কায়েম করেন সামরিক একনায়কতন্ত্র। কালাকানুন জারি করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করা হয়। পক্ষান্তরে জাতির পিতার হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালের অক্টোবরের কারচুপির নির্বাচনের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা দখল করে কায়েম করে লুটেরা রাজনীতি। স্থবির হয়ে পড়ে উন্নয়নের চাকা। আওয়ামী লীগসহ সকল বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে সারাদেশে জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে। বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়ে ‘রূপকল্প ২০২১’ তুলে ধরে দিন বদলের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে আমরা এগিয়ে চলেছি। আমরা ইতিমধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের রায় কার্যকর করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করেছি। জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচার ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার যখন যুদ্ধাপরাধী দুর্নীতিবাজ ও লুটেরা এবং গ্রেনেড হামলাকারীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে তখন জনগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত শক্তি ষড়যন্ত্র ও অরাজকতার মাধ্যমে উন্নয়ন এবং গণতন্ত্রের অভিযাত্রাকে ব্যাহত করতে চাচ্ছে। এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহবান জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাতকচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও জনগণের কাছ থেকে তাঁর স্বপ্ন ও আদশের্র মৃত্যু ঘটাতে পারেনি। পনের কোটি বাঙালির অন্তরে প্রোথিত রয়েছে তাঁর ত্যাগ ও তিতিক্ষার দীর্ঘ সংগ্রামী জীবনাদর্শ। আসুন, জাতির পিতাকে হারানোর শোককে শক্তিতে পরিণত করে তাঁর স্বপ্ন সোনার বাংলা বাস্তবায়নের সংগ্রামে এগিয়ে যাই। ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ একটি গণতান্ত্রিক শান্তিকামী ও অসামপ্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার এ সংগ্রামে আমাদের অবশ্যই জয়ী হতে হবে।