Plastic pollution: A serious threat to environment
— April 30, 2022Md. Arafat Raahman:Plastic pollution is the extraction of plastics by the environment which in turn has adverse effects on wildlife,…
নিজস্ব প্রতিবেদক: ফলের ম-ম গন্ধে ভরপুর| ঢাকার আহসানউল্লাহ রোডের বাদামতলী ঘাটের ফলপট্টিতে ভিড় ব্যবসায়ীদের। তাঁরা কেউ আড়ত মালিক, কেউ পাইকারি ব্যবসায়ী, আবার কেউ বা খুচরা ব্যবসায়ী। আড়ত মালিক ও ব্যবসায়ীরা ঘিরে রেখেছেন আমভর্তি ট্রাক। আর ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়েই উঁচু স্বরে হাঁক_’নকলা আম। শেষ হয়ে যাবে এখুনি।’ এই হাঁকে ফলপট্টিতে থাকা আরো অনেক ব্যবসায়ী হুমড়ি খেয়ে পড়েন ট্রাকের সামনে। তাঁরা রীতিমতো প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হন আম কিনতে।
‘আমে কি ফরমালিন দেওয়া আছে?’ পাশে দাঁড়িয়ে এমন প্রশ্ন করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলেন আড়তের শ্রমিক সিরাজ। বললেন, ‘আপনারে আর আম কিনতে হবে না, শুধু দেখেই যেতে হবে। মেডিসিন ছাড়া কি আর আম আছে?’
অনুসন্ধানকালে ফল ব্যবসায়ীরা নিজ মুখেই বলেছেন, ফল মানেই কেমিক্যাল মেশানো। বাজারে এমন কোনো ফল নেই, যাতে রাসায়নিক মেশানো হয় না।
সরেজমিন বাদামতলী ফল আড়তে গিয়ে দেখা যায়, আম, কাঁঠাল, আপেল, মাল্টা, আনারস, কলাসহ নানা ফলে সয়লাব পুরো এলাকা। হাজি ট্রেডার্স নামের এক ফলের দোকানের মালিক ইকবাল হোসেন জানান, বাদামতলীতে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন রকমের ফল আসে। দেশি সব ফলেই কেমিক্যাল মেশানো হয়। যেমন:- ‘ক্যালসিয়াম কার্বাইড’ ছাড়া কোনো আম নেই। কার্বাইড দিয়ে ফলের পচন রোধ করা হয়।
আরেক ব্যবসায়ী বলেন, ‘যদি মনে করি কেমিক্যাল দেব না, তাহলে বর্তমানে যে আম ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছি, ওই আম কেজিপ্রতি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করতে হবে। মাল গুদামে রাখার পর একবার পচন ধরলে সব শেষ হয়ে যায়। তাই আগে-পরে যখনই হোক, কেমিক্যাল দেওয়া ছাড়া ব্যবসায়ীদের কিছু করার নেই।’
কথা হয় ফরিদপুর থেকে আসা ব্যবসায়ী আমজাদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ভেজাল ছাড়া কোনো জিনিস আছে? আমরা জেনে-শুনেই ভেজাল বিক্রি করি।’ বাদামতলী এলাকা ঘুরে কথা হয় আম, আপেল, মাল্টাসহ বিভিন্ন ফলের ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন, মোশারফ হোসেন, আশ্রাফ উদ্দিন, আবদুর রহমানসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁদের দাবি, আম রাজশাহী, সাতক্ষীরা, মেহেরপুরসহ বিভিন্ন স্থান থেকেই কেমিক্যাল দিয়ে পাঠানো হয়। এমনকি ভারত থেকে আনা আমেও কেমিক্যাল দেওয়া থাকে।
আহসানউল্লাহ রোড খানকা শরিফ মার্কেটের সামনে আম বিক্রি করছিলেন শরীফ মিয়া। তিনি এক চেয়ারে বসে আরেক চেয়ারে পা মেলে টাকা গুনছেন । জিজ্ঞেস করতেই জানালেন, ‘যশোরের নকলা। এক ক্রেতা আমে কেমিক্যাল আছে কি? জিজ্ঞেস করতেই তিনি রেগে বললেন- ‘থাকলে আছে না, থাকলে নাই।’
নদীর ওপারে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী সোহরাব বলেন, ‘ভাই রে, আম কিনে ভরসা পাচ্ছি না। বিক্রি করতে গেলেই ক্রেতারা বলে, ফ্রেশ আম তো?’
আহসানউল্লাহ রোডের বুড়িগঙ্গা ভবনের পেছনে গিয়ে দেখা যায়, সারিবদ্ধভাবে পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে বিভিন্ন ফলের ঝুড়ি। পাতিলের পানিতে কলা চুবানোর কারণ জিজ্ঞেস করলে মাসুদ নামের যুবকটি জানান, এ পানিতে কলা পাকানোর জন্য কার্বাইড আছে। পাশে পলিথিন দিয়ে ঢাকা কলার স্তূপেও কেমিক্যাল মেশানো বলে জানান তিনি। কথা হয় পাইকারি কলা ব্যবসায়ী মো. সবুর, সালাম, মঞ্জু, আকবরসহ অনেকের সঙ্গে। তাঁরা জানান, কলায় কেমিক্যাল না দিলে ব্যবসায় লাভ হয় না।
মার্কেটের সামনে ফুটপাতে কাঁঠাল বিক্রি করছিলেন বাবুল সর্দার। কেমিক্যাল দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর কাছেই শতাধিক কাঁঠাল রয়েছে বিক্রির জন্য, যার বেশির ভাগই কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো। তিনি আরো জানান, গাজীপুর থেকে ঢাকায় বেশি কাঁঠাল আনা হয়। বাগান থেকে কাঁঠাল পাড়ার পরপরই কেমিক্যাল দেওয়া হয়। শ্যামবাজারের আড়তে হাজার হাজার কাঁঠাল এভাবে কেমিক্যাল দিয়ে গুদামজাত করে রাখা হয়েছে।
পাশেই অবস্থান করা আনারস ব্যবসায়ী শফিকুর রহমান (৬০) বলেন, আনারস আনা হয় রাঙামাটি থেকে। সেখান থেকে কেমিক্যাল দেওয়া অবস্থায় তাঁরা কিনে আনেন। ঢাকার বিভিন্ন আড়তে এনে আরেক দফা কেমিক্যাল দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হয়।
ওয়াইজ ঘাট বাকল্যান্ড বাঁধ রোডে (বাদামতলী ঘাটসংলগ্ন) ঝাঁকা সাজিয়ে আম বিক্রি করছিলেন ফারুক মিয়া। জানালেন, পাকিস্তানি আম। পাকা আমের রং হলুদ। পাইকারি নিলে ৩০ টাকা কেজি। খুচরা ৫০ টাকা। এই আমে কোনো মেডিসিন দেওয়া নেই বলে তাঁর দাবি। পাশেই রয়েছে গোপালভোগ ও ক্ষিরসাপাত আম সাজানো।
ঢাকা মহানগর ফল আমদানি-রপ্তানিকারক বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের কোষাধ্যক্ষ হাজি শাহজাহান মিয়া দাবি করেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়েই বেশির ভাগ ফল ঢাকায় আনা হয়। আনার সময় কয়েক দফা চেক করা হয়। ফল এনে কোল্ড স্টোরেজে রাখা হয়। এরপর পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাঁদের কাছ থেকে কিনে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন। তাই সবাই জেনেশুনেই এ কাজ করে।
সরকার থেকে এ ব্যাপারে ফল পাকানো ও দীর্ঘদিন ধরে বিক্রির ব্যবস্থা করে দিলে এ অবৈধ উপায়ে তাঁরা ব্যবসা করতেন না। তিনি জানান, আমাদের কী দায় পড়েছে ফলে ফরমালিন দেওয়ার?