খুলনা অঞ্চলের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভা গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক এর বক্তব্য
— October 29, 2011তারিখ ঃ ২৯ অক্টোবর ২০১১
সময় ঃ বিকাল ৩ঃ৩০ ঘটিকা
স’ান ঃ বাংলাদেশ ব্যাংক, খুলনা।
বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগদান করার পর হযরত খান জাহান আলী (রঃ) এর পূণ্যভূমি খুলনা শহরে এটা আমার দ্বিতীয় সফর। সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড বাসত্মবায়নে ব্যাংকিং খাতের অংশগ্রহণে সামপ্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক গৃহীত আর্থিক অনত্মর্ভুক্তিকরণ কর্মসূচিসহ নানামুখী পদড়্গেপ বাসত্মবায়নে মাঠ পর্যায়ে আপনাদের ভূমিকা ও আমাদের প্রত্যাশার ড়্গেত্রসমূহ চিহিক্রত করার প্রয়োজনেই এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। আমার বক্তব্যের শুরম্নতেই দেশের সর্বশেষ অর্থনৈতিক পরিসি’তি সমপর্কে কিছুু বলতে চাই।
সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিসি’তি ঃ
ক্স বিশ্বব্যাপী আর্থিক মন্দার পরেও সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গৃহীত সময়োপযোগী নীতি-পদড়্গেপের কারণে বাংলাদেশের আর্থিক পরিসি’তি সি’তিশীল রয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামষ্টিক অর্থনীতি সংক্রানত্ম নীতিগত সিদ্ধানত্ম গ্রহণে আমরা বরাবর সি’তিশীল ও সন্মুখাভিমুখী। বিগত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশের কাছাকাছি (৬.৬৬%) অর্জিত হয়েছে। কৃষিজীবী, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীসহ সর্বসত্মরের জনগণের কর্মকান্ডের কারণে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি র ক্রমবর্ধমান ধারার গতিশীলতা থেকে আশা করা যায় যে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি চলতি অর্থবছরে ৭ শতাংশ অর্জন করা সম্ভবপর হবে।
ক্স চলতি অর্থবছরের (২০১১-১২) প্রথম তিন মাসে দেশে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬.১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২২.৫৬ শতাংশ বেশি এবং প্রথম দুই মাসে আমদানি ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫.৪৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৯.৫৮ শতাংশ বেশি। মূলত বিশ্ববাজারে খাদ্য ও জ্বালানি ও রপ্তানি-সহযোগী আমদানি পণ্যের দাম বাড়ায় এবং মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির জন্যে সামগ্রিকভাবে আমদানি ব্যয় বেড়েছে। তবে, আমদানির তুলনায় রপ্তানি প্রবৃদ্ধি বেশি হয়েছে, যা ইতিবাচক।
সেপ্টেম্বর ২০১১ এর তথ্য মোতাবেক বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৯.৭৯ শতাংশ এবং পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ভিত্তিতে তা ১১.৯৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। মূল্যস্ফীতির এই ঊর্ধ্বগতি মূলতঃ খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে। বর্তমানে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য মজুত রয়েছে। প্রয়োজনীয় আমদানিও অব্যাহত রয়েছে। ফলে, খাদ্যমূল্যের সি’তিশীলতা আমাদের মুদ্রাস্ফীতি প্রশমনে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ মুদ্রা এবং ব্যাপক মুদ্রা কমানোর মাধ্যমে মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরার লড়্গ্যে সুদৃঢ়ভাবে তার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করে আসছে যা পরবর্তী মাসগুলোতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনবে বলে আমি আশা করি। উচ্চ জ্বালানি আমদানি ব্যয়ের ফলে সৃষ্ট বৈদেশিক মুুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি অভ্যনত্মরীণ খাদ্যের মজুদ বৃদ্ধি র মাধ্যমে পূরণ করা হবে যা খাদ্য আমদানি ব্যয় অনেকটাই লাঘব করবে।
ক্স সামপ্রতিক সময়ে মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কয়েকটি দেশে রাজনৈতিক অসি’রতা সত্ত্বেও অর্থবছর ২০১০-১১ তে মোট রেমিট্যান্স এর পরিমাণ ছিল ১১৬৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ঐ বছরের আমদানি ব্যয়ের শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ পূরণ করেছে। অর্থবছর ২০১১-১২ এর প্রথম ০৩ মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) রেমিট্যান্সের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৯৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা পূর্বের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৯.৩৪% বেশি। এ বছর আগের চেয়ে বেশি সংখ্যক জনশক্তি বিদেশ যাচ্ছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তাই রেমিট্যান্স প্রবাহেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমরা আশা করছি। ১৮ অক্টোবর ২০১১ তারিখে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১০.০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই রিজার্ভ সনেত্মাষজনক পর্যায়ে রাখার জন্যে বীঢ়ড়ৎঃ ঢ়ৎড়পববফং ৎবধষরুধঃরড়হ দ্রম্নততর করা, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ানো, আমদানি ব্যয় মনিটরিংসহ নানামুখী পদড়্গেপ গ্রহণ করা হচ্ছে।
চলমান পাতা…./০২
-২-
এখন আমি খুলনা অঞ্চলে খাতভিত্তিক ঋণ কার্যক্রমের বিষয়ে কিছু বলতে চাই ঃ
ক্স আমি জেনেছি যে, চলতি অর্থবছরে খুলনা অঞ্চলের আওতাধীন ব্যাংকগুলোর জন্যে কৃষি ঋণ বিতরণে লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩২১ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) আপনারা বিতরণ করেছেন ২১৮ কোটি টাকা, যা লড়্গ্যমাত্রার ১৬ শতাংশ। এ বছর (২০১১) খুলনা অঞ্চলে এসএমই ঋণ বিতরণের লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪১৫ কোটি টাকা। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) এসএমই ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ২১৭৬ কোটি টাকা যা লড়্গ্যমাত্রার ৬৪ শতাংশ। কৃষি ও এসএমই ঋণ বিতরণের লড়্গ্যমাত্রা অর্জন এবং কৃষি ও এসএমই ঋণ আদায়ে আপনাদের আরো গতিশীল ও অগ্রণী ভূমিকা আশা করছি।
ক্স এছাড়া, চলতি অর্থবছরের জন্যে খুলনা এলাকায় ৪% রেয়াতী সুদহারে আমদানি বিকল্প ফসল চাষে যেখানে সামগ্রিকভাবে ব্যাংকিং খাতে ১৯১ কোটি লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেখানে খুলনা এলাকায় মাত্র ১০.৫০ কোটি টাকার লড়্গ্যমাত্রা নির্ধারণ খুব কম বলে আমি মনে করি। আপনারা জানেন, সরকার ঘোষিত এ সুবিধার আওতায় বিগত বছরগুলোতে কোন ঋণ বিতরণ করা না হলেও গত অর্থবছর হতে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশক্রমে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ৬টি ব্যাংক মিলে এ খাতে প্রায় ৭১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এ প্রসঙ্গে আমি উলেস্নখ করতে চাই যে, গত অর্থবছরে ডাল ও পেঁয়াজের আমদানি এলসি খোলার পরিমাণ যথাক্রমে ৪৪% ও ৫৪% কমেছে। একইসাথে আদার মূল্য সি’তিশীল রয়েছে। ফলে ডাল, পেঁয়াজ ও আদার অভ্যনত্মরীণ উৎপাদন কি পরিমাণ বেড়েছে তা এ মুহূর্তে বলা সম্ভব না হলেও এসব ফসল চাষে রেয়াতী হারে ঋণ বিতরণ যে সুফল বয়ে এনেছে তা সহজেই অনুমেয়। কাজেই খুলনা অঞ্চলে ডাল, তেলবীজ, মসলা ও ভুট্টা চাষে ৪% রেয়াতী সুদহারে ঋণ বিতরণে আপনারা এগিয়ে আসবেন বলে আমার বিশ্বাস।
ক্স রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর খুলনা অঞ্চলাধীন শাখাসমূহে ১০/- টাকা জমাগ্রহণপূর্বক খোলা ১২ লড়্গ ২৭ হাজার কৃষকের একাউন্টে ২ কোটি ৬৫ লড়্গ টাকা সঞ্চয় রয়েছে। একাউন্টগুলো সচল রাখা এবং এতে সঞ্চয়ের পরিমাণ কিভাবে আরো বৃদ্ধি করা যায় সে বিষয়ে আপনারা প্রয়োজনীয় ব্যবস’া গ্রহণ করবেন বলে আশা রাখি।
ক্স খুলনা এলাকা মৎস্য, পশুপালন, মসলা, সবজি, ভূট্টা ইত্যাদি কৃষিভিত্তিক এবং হালকা প্রক্েশলসহ এসএমই খাতে বিনিয়োগের জন্য একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চল। সঙ্গতকারণে, এ সমসত্ম খাতের উন্নয়নে অধিক বিনিয়োগ করার জন্যে আমি আপনাদের আন্সান করছি।
ক্স পরিশেষে, আমানতকারীদের স্বার্থ রড়্গা, ব্যাংকের ওপর জনগণের আস’া ও বিশ্বাস দৃঢ় করা, গ্রাহকদের সাথে সুসমপর্ক স’াপন এবং সর্বোপরি উন্নত ও দড়্গ গ্রাহক সেবা নিশ্চিত করার জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে ও শাখা অফিসগুলোতে গ্রাহক স্বার্থ সংরড়্গণ কেন্দ্র স’াপনের বিষয়টি আপনাদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। আমর শীগল্পগিরই ংযড়ৎঃ পড়ফব (১৬২৩৬) চালু করতে যাচ্ছি। এছাড়া, জনসচেতনতা বৃদ্ধি র জন্যে ভরহধহপরধষ ষরঃবৎধপু ঢ়ৎড়মৎধস চালু করতে যাচ্ছি। কিন’ আপনাদের অনেক ব্যাংকই বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট করার সময় অভিযোগ প্রাপ্তির বিষয়ে শূন্য বিবরণী দাখিল করছে, যা অবাসত্মব বলে মনে হয়। ফলে প্রকৃতপড়্গেই গ্রাহক স্বার্থ সংরড়্গণে আপনাদের তরফ হতে কার্যকরী উদ্যোগ ও পদড়্গেপ আশা করছি।
সবাইকে ধন্যবাদ।সংবাদ বিজ্ঞপ্তি: