Bangabandhu conferred ‘FOSWAL Literature Award’ for his trilogy
— March 26, 2023RN Desk: The Foundation of SAARC Writers and Literature (FOSWAL) on Sunday conferred “Special Literary Award” to Bangladesh’s Father of…
বিকেল বেলা । নদীর পাড়ে হিমেল বাতাস বইছে । করিম ও লতিফ নদীর পাড়ে বসে আছে ।
করিম বলছে , লতিফ এবার সাধারণ নির্বাচনে যদি নৌকা জিতে তইলে মোগো কষ্টের দিন শেষ হইব । পাঞ্জাবীরা আর মোগো অত্যাচার করতে পারব না ।
লতিফ বলল , আরে ভাই আমার এই নির্বাচন নিয়ে কোন মাথা ব্যাথা নাই । তিন বেলা তিন মুঠো ভাত খাইতে পারি । এই অনেক । যদি নির্বাচনে নৌকা জিতে তইলে আমি নৌকার পক্ষে আর যদি না জিতে তইলে আমি কারো পক্ষে ন ।
বেশিক্ষন তারা কথা বলল না । কিছুদিন পর মানুষ জয়ের ধ্বনি দিতে লাগল । লতিফ ও করিম বুঝতে পারল এই নির্বাচনে নৌকা জয় লাভ করেছে । সাথে সাথে তারা রেডিও শুনতে বাসায় ফিরে এলো । তারা রেডিওতে শুনতে পেল পাকিস্তান সরকার নৌকার হাতে ক্ষমতা দিচ্ছে না । তারা কিছুক্ষণ পর আবার শ্লোগান শুনতে পেল । কিন্তু এবার আর জয়ের শ্লোগান না । এবার সবাই শ্লোগান দিচ্ছে , “বীর বাঙ্গালি অস্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো , এগিয়ে চল শেখ মুজিব আমরা আছি তোমার পাশে” ।
১৯৭১ সাল । চারদিকে শুধু আন্দোলন আর আন্দোলন । সে বছর ২৫ শে মার্চ কাল রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঢাকায় নির্বিচারে গণ হত্যা চালানো শুরু করল । সেদিন পাক হানাদাররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেফতার করল । তিনি গ্রেফতার হওয়ার আগে স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে গেলেন ।
করিম লতিফকে বলল , এবার যা দেখছি পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে অস্র তুলতেই হইব ।
লতিফ বলল , অস্র তোলা কি সহজ কথা । আর পাকিস্তানিগো কাছে অনেক ভালো ভালো অস্র আছে । মোরা কি দিয়া তাগো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করমু ?
করিম কোন কথা বলল না । কিছুদিন পর করিম দেখল মানুষ যুদ্ধের জন্য ভারত চলে যাচ্ছে । করিম এক মুহূর্ত দেরি না করে লতিফের বাসায় দৌড়ে গেল । তারপর সে লতিফকে বলল , কি লতিফ কইছিলিনা পাকিস্তানিগো লগে কি দিয়া যুদ্ধ করমু ? উত্তর পাইয়া গেছিগা । লতিফ বলল , উত্তর টা কি ? করিম বলল , মানুষ যুদ্ধের লিগা ভারতে যাইতাছে । ভারত মোগো অস্র , আশ্রয় , খাবার সব দিতাছে ।
লতিফ বলল , করিম যুদ্ধ করতে গেলে মোরা মইরাও যাইতারি । আর জীবন দিয়া কি এত সোজা । যে দেশের লিগা জীবন দিমু ।
করিম বলল , এই শালা তুই মির জাফরের মতো হইছস নী । শালা ভিতুর বাচ্চা ।
করিম তার কিছু বন্ধু নিয়ে ভারত জাবার পরিকল্পনা শুরু করল । লতিফ দেখল , ওর সব বন্ধুরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে । লতিফ করিমকে বলল , ভাই রাগ করিস না । মুই সেদিন তোর লগে মজা করছিলাম ।
প্রথমে করিম বলল , মোরা কোন মির জাফররে দলে রাখিনা । কিছুক্ষণ পর আবার বলল , করিম দেখ ভাই তোর যদি দেশ স্বাধীন করার সাহস না থাকে তইলে মোগো লগে আসিস না । লতিফ বলল , আমার সেই সাহস আছে ।
করিম তার বন্ধুদের সাথে পরিকল্পনা শুরু করল কোন পথ দিয়ে তারা ভারতে যাবে । এই পরিকল্পনা করতে তাদের প্রায় এক মাস সময় লাগল । একদিন লতিফ হাঁটতে হাঁটতে তাদের গায়ের স্কুলের সামনে গেল । সে দেখতে পেল , মানুষ দলে দলে রাজাকারে নাম লিখাচ্ছে । সে রাজাকারে নাম লিখানোর কথা ভাবতে লাগল । কিন্তু তার মনে পড়ল রেডিওর কথা । গতকাল সে রেডিওতে শুনেছিল দেশের জনগণ পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করছে । তাই সে মনে মনে ভাবল , সে খালি যুদ্ধের প্রশিক্ষন নিবে । যুদ্ধ আর করবে না । কারণ সে রাজাকারে ভর্তি হলেও মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে মারা যেতে পারে । একদিন তারা ভারতের এক মুক্তিযোদ্ধা প্রশিক্ষন ক্যাম্পে পৌছালো । তারা যুদ্ধের জন্য প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করল । এক রাতে লতিফ অন্য মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে পালিয়ে গেল । এভাবে সে বিভিন্ন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে ঘুরতে লাগল । একদিন তার কাছে খবর এলো তার প্রিয় বন্ধু করিম যুদ্ধে শহীদ হয়েছে । কিছুক্ষণ তার চোখ দিয়ে পানি পড়ল । আবার কিছুক্ষণ পর সে ভাবতে লাগল , যাই হোক আমি যুদ্ধ করব না । যেখানে লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ যুদ্ধ করে শহিদ হচ্ছে সেখানে সে যুদ্ধে যাচ্ছে না । কারণ সে একজন বেঈমান ।
লেখকঃ মেহরাব হক
শ্রেণিঃ ষষ্ঠ